ছয়টি পিস্তলসহ ভারতের অস্ত্র ব্যবসায়ী খায়রুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
2016.11.01
ভারতীয় এক অস্ত্র ব্যবসায়ীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ভারতের অস্ত্র ব্যবসায়ীর প্রকৃত নাম খায়রুল ইসলাম মণ্ডল। তিনি বাংলাদেশের ভুয়া নাগরিক। কুড়িগ্রামের পাটগ্রাম থেকে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন তিনি। তাতে খায়রুলের নাম দেওয়া হয়েছে শরিফুল ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুলসহ চারজনের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।
যেভাবে খায়রুল গ্রেপ্তার
গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে খায়রুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাঁর হেফাজত থেকে ছয়টি বিদেশি পিস্তল, চারটি বিদেশি ওয়ান শুটার, ১২টি ম্যাগাজিন ও ৩৫টি গুলি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খায়রুল স্বীকার করেছে, সে অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশ ও ভারতের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের যোগসাজশে অস্ত্র নিয়ে আসত। পরে সেগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গার সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে বিক্রি করত।”
খায়রুলের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ভারতের অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বিহার থেকে বালুর ট্রাকে করে অস্ত্রগুলো পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসত। পরে সেগুলো বাংলাদেশে পাচার করতেন খায়রুল ও তাঁর সহযোগীরা।
পুলিশ জানায়, খায়রুলের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অস্ত্র ব্যবসা করছেন।
আবদুল বাতেন বলেন, কার কার কাছে খায়রুল অস্ত্র বিক্রি করতেন এবং এই ব্যবসার সঙ্গে যারা যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।
অস্ত্র দেশে তৈরি হয়, সীমান্ত দিয়েও আসে
সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযানে নিহত ও আটক হওয়া জঙ্গিদের কাছেও বিদেশি অস্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। খায়রুল জঙ্গিগোষ্ঠীকে অস্ত্র দিয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
“কিছু দেশে তৈরি হয় আবার কিছু সীমান্ত দিয়ে আসে। এসব অস্ত্র যে শুধু দেশেই ব্যবহার হচ্ছে তা নয়, সীমান্ত এলাকাগুলোতেও এর ব্যবহার আছে,” বেনারকে সম্প্রতি জানান সেনাবাহিনীর সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন।
তাঁর মতে, সীমান্ত এলাকাগুলোতে অস্ত্রের কেনাবেচা হয়। এসব অস্ত্র হয় ওখান থেকে আসে নয়তো এখান থেকে যায়। মাদকের চোরাচালানকারীদের সঙ্গে অস্ত্রের একটা সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত বলেন, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের চেইন আছে। এই চেইনের মাধ্যমে এসব অস্ত্র এক হাত থেকে আরেক হাতে যায়।
আরও তিনজন গ্রেপ্তার
গত সোমবার খিলক্ষেত, গুলশান ও পল্লবী এলাকা থেকে আরও তিনজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন; রাকিব খান ওরফে টিটু, রবিউল ইসলাম মুন্সি ও হান্নান মোল্লা।
আবদুল বাতেন বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি দেশি এলজি, তিনটি গুলি ও পাঁচটি হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই তিনজন নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকা এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন,” বেনারকে জানান আবদুল বাতেন।
তিনি বলেন, বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র তৈরি, আমদানি ও ব্যবসা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।