অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে বাংলাদেশি সংসদ সদস্য পাপুলের কারাদণ্ড

শরীফ খিয়াম
2021.01.28
ঢাকা
অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে বাংলাদেশি সংসদ সদস্য পাপুলের কারাদণ্ড অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে দণ্ডিত বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। ফাইল ছবি।
[ফোকাস বাংলা]

অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে গত বছর কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে বৃহস্পতিবার চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির এক আদালত। 

পাপুলের দণ্ডিত হওয়ার সংবাদ জানিয়েছে কুয়েতি সংবাদপত্র আল-কাবাসসহ একাধিক গণমাধ্যম। তবে এ বিষয়ে কুয়েত বাংলাদেশেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। 

“আমরাও বিষয়টি গণমাধ্যমের খবরে জেনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির পক্ষ থেকে আমাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি,” বেনারকে বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এফ এম বোরহান উদ্দিন।

তিনি বলেন, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত “অন্যান্য সূত্রে জেনেছেন, ঘুষের মামলায় তাঁর চার বছরের সাজা হয়েছে।” 

পাপুলের বিরুদ্ধে সেখানে অর্থ ও মানবপাচারের আরো দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে বোরহান বলেন, “আমরা আশা করছি আগামীকালের (শুক্রবার) মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।” 

বাংলাদেশের কোনো সংসদ সদস্যের বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে বেনারকে জানান নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। 

এটিকে “অত্যন্ত লজ্জার ঘটনা,” হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি আশা করি, এই রায়ের পর আমাদের সংসদ ও নির্বাচন কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।” 

এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) পাপুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন ড. বদিউল। 

কুয়েতি গণমাধ্যম আল-কাবাস জানায়, পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসেবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহসহ কুয়েতি আরো দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই দুইজন পাপুলের বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী ও দালাল ছিলেন। 

রায়ে পাপুলসহ দণ্ডিত প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার (বাংলাদেশি টাকায় ৫৩ কোটি ২১ লাখের বেশি) অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একই মামলায় কুয়েতের দুই সাংসদ সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবি এবং সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদকে অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে আদালত। 

দণ্ডিত বরখাস্ত মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় ঘুষের বিনিময়ে পাপুলকে সহায়তা করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। 

তবে কুয়েতের এমপি সাদুন ও খুরশিদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও তা প্রমাণিত হয়নি। 

পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

পরদিনই তাঁর স্ত্রী ও বাংলাদেশের সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সেলিনা ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, পাপুল “কুয়েতে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি খ্যাতনামা মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও। এই কোম্পানির কুয়েতি অংশীদারও রয়েছেন।” 

ওই প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত বলেও জানিয়েছিলেন সেলিনা ইসলাম।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে মামলা হয়। জুনে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে ১৭ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। 

পরে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত শেষে পাপুলসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনে। আদালতে বিচার শুরু হয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর। 

এদিকে বাংলাদেশে দুদক পাপুল, তাঁর স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম সেই মামলায় জামিনে আছেন। এর আগে গালফ নিউজ জানায়, কুয়েত কর্তৃপক্ষ পাপুল ও তাঁর কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। 

এক সময়ে সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত যাওয়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় সংরক্ষিত একটি আসনে নিজ স্ত্রীকে এমপি করে আনেন তিনি।

পাপুল প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। 

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর এই পদের যোগ্য থাকবেন না। 

প্রতিবেদন তৈরিতে ঢাকা থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমিন পাপড়ি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।