সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবসা করলে কর দিতে হবে

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.08.10
ঢাকা
200810_Taxing_Social_Media-1000.JPG ঢাকায় অনলাইনে পণ্য সরবরাহকারী এক প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী সাইকেলে করে গ্রাহকের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তাদের মতে, অনলাইন কেন্দ্রিক ব্যবসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৩ এপ্রিল ২০২০।
[রয়টার্স]

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে পরিচালিত সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সোমবার বেনারকে বলেন, “সামাজিক মাধ্যমগুলো আমাদের দেশে ব্যবসা করছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো অর্থ পাচ্ছে না। ব্যবসা করলে কর দিতে হবে।”

“বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে করের আওতায় আনা হয়েছে,” বলেন মন্ত্রী।

সামাজিক মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসাকে করের আওতায় আনতে গঠিত হয়েছে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। কমিটি যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ছয় সদস্যের এই কমিটি সোমবার বিকেলে তৃতীয় বৈঠক করেছে বলে বেনারকে জানান কমিটির প্রধান ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান উল আলম।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে যারা এ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাঁরাও করের আওতায় আসতে পারেন।

“বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের করের আওতায় আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে,” বলেন মিজান উল আলম।

গত ৯ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আরও দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সমন্বয়ে কমিটিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তৃতীয় বৈঠকে দেশের বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবসাকে করের আওতায় আনার পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন সদস্য এবং উদ্যোক্তারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবসাগুলোকে কবে থেকে এবং কীভাবে করের আওতায় আনা হবে সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সাথে সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি বলে বেনারকে জানান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।

“এই সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রবর্তন করার কারণে ই-কমার্সের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে,” মন্তব্য করে তমাল বলেন, “এখন যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর কর আরোপ করা হয় তাহলে সেটি হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতির বিরোধী।”

বর্তমানে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা এক হাজার ২০০ জানিয়ে তিনি বলেন, “ই-কমার্সের কারণে দেশে হাজার হাজার চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই খাত এখন বিকাশমান।”

“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে,” বলে জানান চামড়াজাত পণ্যের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিতা বোস।

তিনি বেনারকে বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ শুরুর পর থেকে হাজার হাজার যুবক-যুবতী স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন। তাঁরা সাফল্যের সাথে ব্যবসা করছেন। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে এখন বিরাট বিরাট শো-রুম, অফিসের প্রয়োজন হয় না।”

“দেশের লাখ লাখ মহিলা যাঁরা আগে ঘরে বসে থাকতেন, ব্যবসা করার কথা চিন্তা করতেন না, তাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করে কেউ জামা-কাপড়, কেউ খাবার, কেউ চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করছেন। তাঁরা দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। দেশে দারিদ্র দূর করছেন,” বলেন মিতা বোস।

মিতা বোস বলেন, “অনেক নারী ইউটিউবে রান্না অথবা কোনো বিষয়ের ওপর চ্যানেল খুলে ব্যবসা করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকলে উনারা কোনোভাবেই উদ্যোক্তা হওয়ার কথা চিন্তাও করতেন না।”

তাঁর মতে, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে দেশে নারীদের মধ্যে ব্যবসার সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। এই অবস্থায় যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর কর আরোপ করা হয় তাহলে দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টির পরিবেশ নষ্ট হবে; অনেকেই ব্যবসা বিমুখ হয়ে পড়বেন।”

মিতা বোস বলেন, “তাই দেশের স্বার্থে এই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর কর আরোপ না করাই শ্রেয়।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।