‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে অচল ঢাকা
2024.07.10
ঢাকা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বুধবার ঢাকাসহ সারাদেশ স্থবির হয়ে পড়ে। এদিকে দুপুরে কোটা বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে স্থিতাবস্থা দেয় আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন আদালত।
এ আবেদন প্রত্যাখান করে বৃহস্পতিবারও কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা ।
বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে চলা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামের এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে রেলপথ ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করার ফলে সারাদেশ কার্যত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অচল ছিল।
এদিন বিকেলে রাজপথ থেকে কর্মসূচি পালন শেষ করে শাহবাগে সমবেত হয়ে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে দুপুরে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র বাতিলে হাইকোর্টের আদেশের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থার আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
বুধবারের আদালতের নির্দেশনার ফলে আগামী চার সপ্তাহ কোন কোটাই আর থাকছে না।
এই নির্দেশনার পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
একই আহ্বান জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথেই রয়েছেন।
টানা আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবারও রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পুরো শহর স্থবির হয়ে পড়ে।
এদিকে ঢাকার বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ও সড়ক অবরোধ করার পাশাপাশি অবরোধ করে রেলপথও। এর ফলে ঢাকার সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জেলাগুলো।
সন্ধ্যায় শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক আসিফ বলেন, “আজ (বুধবার) সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি ছিল। আমাদের সহযোদ্ধারা প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, প্রতিটি রেল লাইনে এই ব্লকেড কর্মসূচি সফল করেছে।”
“আমাদের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিকে জনদুর্ভোগের কারণ হিসেবে অনেকেই উল্লেখ করতে চান। জনমত প্রতিষ্ঠায় এটি একটি অভিনব কর্মসূচি,” বলেন তিনি।
আসিফ আরও বলেন, “সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা ও নির্দেশনা আসতে হবে যে একটি কমিশন গঠন করে এবং স্থায়ী সমাধানের দিকে সরকার এই কোটা ব্যবস্থাকে নিয়ে যাবে।”
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টা থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে, প্রতিটি রেল লাইনে শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানান তিনি।
আদালতের স্থিতাবস্থা
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর একমাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
দুপুরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আদেশেও আছে আন্দোলনকারীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল বিভাগে দিতে পারবে।”
“এখন উচিত এটা বন্ধ করে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যাওয়া। আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই তাদের কাছে,” বলেন তিনি।
আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত: আওয়ামী লীগ
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন কর্মসূচি পরিহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সর্বোচ্চ আদালত। আগস্ট মাসে চূড়ান্ত শুনানিতে শিক্ষার্থীদের দাবি সুবিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। আদালত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে বলেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো ফিরে যেতে।”
প্রসঙ্গত ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দেশে ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হতো এবং বাকি ৮০ শতাংশ পদে নিয়োগ হতো কোটায়।
১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে উন্নীত হয় এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়।
এই ৫৫ শতাংশের আওতায় ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ।
পরে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হলে কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশ
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালসহ সাত দফা দাবিতে বুধবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, “উচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা অবশ্যই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবাররা উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবেন। আজকে আপিল বিভাগে চার সপ্তাহের স্টে অর্ডার দেয়া হয়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি।”
কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে যারা সুপ্রিম কোর্টের গেটে যেয়ে হাইকোর্টকে ভুয়া বলে শ্লোগান দিয়েছে তাদের বিচারের দাবি জানান এই সংগঠক।
“মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি ও গালিগালাজ করে যাচ্ছে যা আইনের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট অপরাধ। অবিলম্বে এদেরকে চিহ্নিত করে ছাত্রত্ব বাতিলসহ আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে,” বলেন তিনি।