তাবলিগের বিরোধ মিটল, ফেব্রুয়ারিতে ইজতেমা

জেসমিন পাপড়ি
2019.01.23
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
190123_Biswa_Ijtema_1000.jpg টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় জুমার নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ১৩ জানুয়ারি ২০১৭।
[মেঘ মনির/বেনারনিউজ]

অবশেষে তাবলিগ জামাতের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষের মধ্যকার বিরোধ মিটেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন।

তবে যাকে নিয়ে এ দ্বন্দ্বের শুরু সেই দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরুব্বি মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভী এবারের ইজতেমায় আসছেন না।

বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দুই পক্ষের ‘মুরুব্বিদের’ নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করার পর এ ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তাঁদের বিরোধ মীমাংসা হয়েছে, এখন আর কোনো বিরোধ নেই। ফেব্রুয়ারি মাসে একসঙ্গে ইজতেমা করতে সম্মত হয়েছেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দুই পক্ষের দুজন প্রতিনিধি বসে ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করবেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্তই হয়েছে দিল্লির মাওলানা সাদ এবার আর ইজতেমায় যোগ দিতে আসছেন না।

তবে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান আমির মাওলানা সাদের ইজতেমায় অংশ নিতে না পারাকে মেনে নিতে পারছেন না তাঁর অনুসারীরা।

এ বিষয়ে সাদপন্থী মুরুব্বি মাওলানা মুরসালিন বেনারকে বলেন, "মিটমাট কীভাবে হলো বুঝতে পারছি না। কারণ, ইজতেমা বাংলাদেশে হলেও সব সময় এর সবকিছু দেখভাল করে দিল্লীর নিজামুদ্দিন মারকাজ।”

সেখানকার বর্তমান আমির মাওলানা সাদ ২২ বছর ধরে ইজতেমার প্রধান অতিথি অর্থাৎ মূল বয়ান করেন এবং তিন বছর ধরে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। আমরা মূল ইজতেমা বলতে এটাই বুঝি।

“এখন এটা ছাড়া যদি কোনো ইজতেমা হয়, অর্থাৎ তাবলিগের বিশ্ব আমির ছাড়া যদি ইজতেমা হয় সেটা অন্য কিছু হতে পারে, অন্য ইসলামী সম্মেলন হতে পারে কিন্তু আমরা যে ইজতেমার সাথে পরিচিত, সেটা হবে না,” বলেন তিনি।

এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম জমায়েত তার ঐতিহ্য হারাবে বলেও আশঙ্কা করেন মাওলানা মুরসালিন।

তিনি বলেন, “তবে একটা জিনিস আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এতদিন এই দু’পক্ষ কিন্তু একসঙ্গে বসেনি। আজ দু’পক্ষের সবাই একত্রিতভাবে সুন্দরভাবে বসছিলাম।”

একসাথে বিশ্ব ইজতেমা করতে রাজি হওয়ার জন্য দুপক্ষ কোনো শর্ত দিয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ বেনারকে বলেন, “তাঁরা যেসব শর্ত দিয়েছেন মেনে নিয়েছি। সেভাবেই আগামীকাল বৈঠকে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনের বিষয়ও চূড়ান্ত হবে।”

তবে শর্তগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

কয়েক লাখ লোকের জমায়েতের কারণে মুসলমানদের সর্ববৃহৎ জমায়েত হজের পর বিশ্ব ইজতেমাকে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মিলন বলা হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে রাজধানী ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হয়ে থাকে। তবে তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে এবার তা স্থগিত হয়ে যায়।

ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন মুসল্লি নিহত হন এবং আহত হন কয়েকশ জন।

বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মধ্যে তাবলিগের শুরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেকুল ইসলাম এবং দেওবন্দ অনুসারীদের মধ্যে শুরা সদস্য মাওলানা জুবায় আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বিরোধ মীমাংসায় সমন্বয়কারীর ভূমিকায় ছিলেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মাজহারুল ইসলাম। তিনি বেনারকে বলেন, “অনেক আলাপ আলোচনার পরে উভয় পক্ষ একসাথে এক ইজতেমা করতে সম্মত হয়েছে।”

“দু’পক্ষের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা মিটে গেছে। এখন আর বিরোধ নেই,” বলেন তিনি।

যে কারণে দ্বন্দ্ব

তাবলিগের বিভক্ত দু’পক্ষের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংগঠনটির মধ্যকার এই দ্বন্দ্বের শুরু হয় বর্তমান আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে।

মূলত ১৯২০ এর দশকে মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াস কান্ধলভী তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।

মাওলানা ইলিয়াসের মৃত্যুর পর তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন তাঁর ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে একটি শুরা কমিটির ওপর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৫ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের লাহোরের রাইবেন্ডে ইজতেমা চলার সময় সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব আসে। কিন্তু সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে।

এরই মধ্যে গত বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বিরূপ পরিস্থিতির মুখে শেষ পর্যন্ত ইজতেমায় অংশ না নিয়েই তাঁকে ঢাকা ছাড়তে হয়।

বিবাদের জেরে এবার দু’পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে সভা করে ইজতেমা স্থগিত করে। বুধবার সরকারের সাথে দুপক্ষের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর আগে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।