মোবাইল নম্বর না বদলে অপারেটর বদলের সুবিধা শুরু

জেসমিন পাপড়ি
2018.10.01
ঢাকা
181001_SIM_NMP_1000.jpg কুষ্টিয়ায় নিজের ধানের জমিতে কাজ করার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলছেন কৃষক জালাল খাঁ। ১৭ মার্চ ২০০৫।
এফপি

নানা জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে বাংলাদেশে মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবার পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এর ফলে যেকোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকরা অন্য নেটওয়ার্কে গিয়ে তাদের কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাক ব্যবহার করতে পারবেন।

সোমবার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সেবা শুরুর ঘোষণা দেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক।

এই সেবা নিতে গ্রাহককে ৫০ টাকা চার্জের সঙ্গে সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স এবং ভ্যাটসহ মোট ১৫৮ টাকা খরচ দিতে হবে বলে জানান তিনি।

জহুরুল হক বলেন, ‘পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক সেবা’ বলা হলেও গ্রাহকেরা এখন থেকেই পুরোদমে এমএনপি সেবা পাবেন।

এমএনপি সেবা চালুর ফলে অপারেটররা তাদের সেবার মান আরও উন্নত করবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।

এ বিষয়ে টেলিযোাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বেনারকে বলেন, “এমএনপি সেবা চালু করা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সফলভাবে সেটা চালু করতে সক্ষম হয়েছি। এর ফলে অপারেটররা তাদের সেবার মান বাড়াতে সচেষ্ট হবে। কারণ, যে অপারেটর ভালো সেবা দেবে তাদেরকেই বেছে নেবে গ্রাহকরা।”

তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণ না করেই এমএনপি সেবা চালু করেছে সরকার। ফলে খুব বেশি সুবিধা পাবে না গ্রাহকরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বেনারকে বলেন, “আমরা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করার পর এমএনপি চালু করার কথা বলে আসছিলাম। কিন্তু সরকার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য অপারেটরদেরকে তাগিদ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো কলরেট বাড়ানো হয়েছে। অপারেটরদের দুর্বল নেটওয়ার্কের ফলে এমএনপি সফলতা লাভ নাও করতে পারে।”

গত বছর নভেম্বরে এমএনপি সেবার লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক। এ বছরের আগস্টে এ সেবা শুরুর কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সেটা আবারও পিছিয়ে যায়।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ৭২টি দেশে এমএনপি সেবা চালু আছে। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবেশি দেশ ভারত এবং ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তান এমএনপি সেবা দিচ্ছে।

খরচ ১৫৮ টাকা

জুলাই মাসে এমএনপি নীতিমালা চূড়ান্ত করার সময় অপারেটর পরিবর্তনে গ্রাহককে ৩০ টাকা খরচ করতে হবে বলা হয়েছিল। তবে চালুর আগে তা ৫০ টাকা নির্ধারণ করে বিটিআরসি। এই টাকা পাবে বিটিআরসি ও ইনফোজিলিয়ন। এর টাকার সাথে ভ্যাট যুক্ত হয়ে গ্রাহকের ফি দাঁড়াচ্ছে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা।

এ ছাড়া সিম পরিবর্তনের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১০০ টাকা কর রয়েছে। সব মিলিয়ে এনএমপি সেবা নিতে গ্রাহককে ১৫৮ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই খরচ আরো কম।

তবে বিটিআরসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “এ সেবা নিতে গ্রাহককে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে, এমএনপি প্রতিষ্ঠান লাভ বেশি করলে এই টাকার হার ধীরে ধীরে কমিয়ে দেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, “এমএনপি চালুর ঘোষণার সময় সরকারের শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তি পর্যন্ত বলেছিলেন গ্রাহকদেরকে শুধুমাত্র ১৫ টাকা সার্ভিস চার্জ ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হবে। অথচ সেটি না করে অযৌক্তিক খরচ বৃদ্ধি করা হলো।”

তিনি আরো বলেন, “সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে এমএনপি করার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে করে গ্রাহকেরা হয়রানির শিকার হবেন। কারণ আমাদের দেশে অপারেটরদের সার্ভিস সেন্টারগুলি পর্যাপ্ত নয়। এতে করে গ্রাহকদের সময় ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের সম্ভাবনাই বেশি।”

ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক জানায়, গ্রাহকের অপারেটর বদল হওয়ায় তার তথ্য নতুন একটি অপারেটরে যাচ্ছে। এ কারণে গ্রাহককে এমএনপির জন্য নতুন সিম তুলতে হচ্ছে। গ্রাহক যে অপারেটরে যেতে চান, সে অপারেটরের কেন্দ্রে গিয়ে ফি দিয়ে তাঁকে সিম তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সিম পেতে একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় লাগবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সক্রিয় হবে।

তবে পুনরায় অপারেটর পরিবর্তন করতে হলে গ্রাহককে অপেক্ষা করতে হবে ৯০ দিন।

সংবাদ সম্মেলনে ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন বলেন, “১৫ কোটি গ্রাহকের জন্য এ সেবা শুরু করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গ্রাহকরা আজ থেকে পোর্ট করতে পারছে।”

অব্যবহৃত টক টাইম বা ডেটার যা হবে

কোনো গ্রাহক অপারেটর বদলালে তাঁর অব্যবহৃত টকটাইম বা ডেটার কী হবে জানতে চাইলে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, “আগের অপারেটরের অব্যবহৃত ব্যালেন্স নতুন অপারেটরে পাওয়া যাবে না। তবে ওই টাকা দুই বছর পর্যন্ত আগের অপরেটরে জমা রাখার নিয়ম করা হচ্ছে।”

গ্রাহক দুই বছরের মধ্যে যদি আগের অপারেটরে ফেরত যান, তাহলে তিনি ওই ফেলে আসা ব্যালেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যথায় সেটা সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।

তবে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, অপারেটর বদলালে অব্যবহৃত ডেটা আর ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। সেজন্য ব্যালেন্স শেষ করে তবেই অপারেটর বদল করাই শ্রেয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি কমিশনার রেজাউল কাদের, কমিশনার আমিনুল হাসান, ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেকের সিইও মোহাম্মদ জুলফিকারসহ বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমান মোবাইল সংযোগ রয়েছে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৭৯ হাজার। গত মার্চে দেশে সক্রিয় মোবাইল সংযোগ ১৫ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে।

এর মধ্যে সক্রিয় সংযোগ বিবেচনায় শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোনের রয়েছে সাত কোটি সাত লাখ। চার কোটি ৬১ লাখ সংযোগ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। বাংলালিংকের সক্রিয় সংযোগ তিন কোটি ৩৪ লাখ। এবং সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের রয়েছে ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার সংযোগ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।