অভিবাসী সংকটঃ ব্যাংকক সম্মেলনে জড়ো হচ্ছে ১৭ জাতি

থাইল্যান্ড থেকে পিমুক রাক্কানাম
2015.05.27
Thai-trafficking মালয়েশিয়ায় বুকিত বার্মার জঙ্গলে পুলিশের ফরেন্সিক টিম কবর থেকে পাওয়া দেহাবশেষ পরীক্ষা করছেন। ২৬ মে,২০১৫
এএফপি

অন্তত ১৭টি দেশের প্রতিনিধি শুক্রবার ব্যংককে মিলিত হবার কথা। এক দিনের এই বৈঠকটি হবে এ যাবত কালের নজির বিহীন, আঞ্চলিক অভিবাসী সংকট নিরসনের উপায় নিয়ে।তবে, জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, সম্মুখ সারির দেশগুলির দায়িত্ব হচ্ছে, এ নিয়ে শুধু কথা বলা চেয়ে জরুরী ভিত্তিতে সমস্যা মোকাবেলার উপায় খুঁজে বের করা।

জাতিসংঘের বিবেচনায় যেসব দেশের মানুষ নৌকায় চড়ে সংকটের মধ্যে পড়েছে এবং মানবপাচারকারীর পাল্লায় পড়ে জীবন বিপন্ন হচ্ছে তাদের উদ্ধার, আশ্রয় ও মানবিক সহায়তার বিষয়গুলিকে দিতে হবে অগ্রাধিকার।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাস বেনার নিউজকে বলেন, “কেই জানেনা কোথায় এর শেষ তবে অপরাধীদের নিশ্চিহ্ন করাই সবচেয়ে জরুরি। মানবিক জীবন সুরক্ষাই হচ্ছে সব চেয়ে বড় কাজ”। উল্লেখ্য, ইউএনওডিসি জাতিসংঘের নেতৃস্থানীয় সংস্থা যা জাতিসমূহের মধ্যকার সংগঠিত অপরাধ বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ডগলাস আরো বলেন, “এই ধরনের সমস্যা চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে যখন পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠান গুরুত্ব পায় এবং তারা যখন সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে না এবং তারা অপরাধীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সচল রাখতে হবে আমাদের তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার জন্য”।

তিনি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলোকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলছিলেন।এসব দেশের মধ্যে বিরাজমান অপরাধ সিন্ডিকেট প্রতিহত করার উপর তিনি জোর দেন।

সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন

মানবপাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়া বিশেষত রোহিংগা মুসলিম ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের উদ্ধার ও তারা যাতে এইপথে অপরাধীদের হাতে না পড়ে সেটা হবে জটিল একটা কাজ আর সেটা সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই মোকাবেলা করতে হবে, জানালেন ইউএনএইচসিআর-এর আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখপাত্র ভিভিয়ান তান।

তার মতে, “ আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবেলায় প্রয়োজন আঞ্চলিক সমাধান।এটা একটা সুখবর যে এই অঞ্চলের দেশগুলি একত্রে বসে কমন সমস্যা নিয়ে কথা বলবে, এটা একটা শুভ সূচনা। আর তার জন্য দরকার যৌথ কর্যক্রম গ্রহন।অপরাধ চক্রকে ভাঙ্গার জন্য আইনি সংস্থাগুলোকে একত্রিত ভাবে কাজে লাগাতে হবে, একা এই কাজ করা সম্ভন নয়”।

যারা এখনো সাগরে ভাসছে তাদের জন্য জরুরি খাদ্য, পানি ও ঔষধ প্রয়োজন।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের হিসেবে এখনো সাগরে ভাসমানদের আনুমানিক সংখ্যা ৪ হাজারের মতো। তবে ৩ হাজার ২০০ অভিবাসী গত ৪ মে পর থেকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ঠাই পেয়েছে।

তান আরো জানান, “ মূল সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে, যতক্ষন পর্যন্ত না মায়ানমার ও বাংলাদেশে ভালো অবস্থা তৈরি করা না যাবে, ততক্ষন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে  পাচারকারীর হাতে পড়ে আরো অনেকেই সাগর পারি দেবার চেষ্টা করেই যাবে”। মায়ানমারকেই তিনি সমস্যার বড় উৎস মনে করেন।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী আনিফাহ আমান বেনার নিউজকে বলেন, “মালয়েশিয়া মায়ানমারের কাছে নিশ্চয়তা চাইবে তাদের দেশের মধ্যকার সমস্যা দূর করার ব্যপারে। সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করার ব্যাপারেও তারা চাপ রাখবে”।

নজিরবিহীন

এধরনের আঞ্চলিক বৈঠক এ অঞ্চলে এটাই প্রথম এবং নজিরবিহীন। থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের হিসেবে ১৭ টি দেশ এতে অংশ নিতে যাচ্ছে। দেশগুলি হচ্ছেঃ থাইল্যান্ড,মালয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া,বাংলাদেশ,মায়ানমার,ভারত,পাকিস্তান,অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড,কম্বোডিয়া,লাওস,ভিয়েতনাম,আফগানিস্তান,ইরান,পাপুয়া নিউগিনি,ফিলিপিন্স,ও শ্রীলংকা।
এছাড়া পর্যবেক্ষক হিসেবে ডেলিগেশন উপস্থিত থাকবে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড থেকে।আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে ইউএনএইচসিআর, ইউএনওডিসি ও আইওএম-এর প্রতিনিধিরাও থাকবেন। থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এটাকে জরুরি মিটিং হিসেবে অভিহিত করেছে।

জঙ্গলে বন্দি শিবির

মে মাসের শুরুতে থাইল্যান্ডে ৩২টি মরদেহ খুজে পাওয়া যায় এরপর ১৩৯টি কবর বের হয় যেখানে মানব পাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের মরদেহ পাওয়া যায়।জঙ্গলে বেশ কয়েকটি বন্দি শিবির থাই পুলিশের নজরে আসে। যেখানে পাচারকারীরা মালয়েশিয়া অভিমুখি অভিবাসীদের এনে মুক্তি পণ আদায় করতো। না পেলে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হতো। মৃতদেহ গুলো সেভাবেই করূণ পরিনতি লাভ করে। এরপরই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মানব পাচারের ইস্যুটি গুরুত্ত সহকারে স্থান পায়।

এদিকে, কয়েকদিন আগে মাত্র থাই সীমান্ত লগ্ন মালয়েশিয়ার জঙ্গলে ২৮ টি গণ কবর খুজে পায় মালয় পুলিশ।মৃতদেহ গুলো ফরেন্সিক পরীক্ষার পর জানা গেছে তাদেরকে অত্যাচার করে মারা হয়েছে। মালয় পুলিশের বেশ কয়েকজনকে এবং ফরেস্ট রেঞ্জারকেও এই পাচার কাজে সহায়তার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার ডেপুটি হোম মিনিস্টার ওয়ান জুনাইদি টুয়াংকু জাফার এই তথ্য জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।