অপহৃত দুই পাহাড়ি নেত্রীর খোঁজ মেলেনি

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.03.19
ঢাকা
ইউপিডিএফ এর দুই নেত্রী অপহরণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন সংগঠন। ইউপিডিএফ এর দুই নেত্রী অপহরণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন সংগঠন। ১৯ এপ্রিল ২০১৮।
বেনারনিউজ

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে রোববার অপহৃত সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর দুই নারী নেত্রীর খোঁজ বের করতে পারেনি পুলিশ।

গত রোববার সকাল নয়টার দিকে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার একটি বাড়িতে আট থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ই্উপিডিএফ) নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নারী নেত্রীকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

অপহৃত নারী নেত্রীরা হলেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও সংগঠনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দয়াসনা চাকমা।

আক্রমণকারীরা ওই বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে সেখানে অবস্থানকারী নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে। গুলিবর্ষণের ঘটনায় ইউপিডিএফ’র সহযোগী সংগঠন যুব ফোরামের সভাপতি ধর্ম সিং চাকমা গুলিবিদ্ধ হন।

ইউপিডিএফ’র নেতা মাইকেল চাকমা বেনারকে বলেন, রাঙ্গামাটি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি কুনেন্দু চাকমাসহ তাঁদের চার নেতা-কর্মী ওই বাসায় খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আট থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী তাঁদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ধর্ম সিংয়ের পায়ে গুলি লাগে। আর অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

ইউপিডিএফ থেকে বেরিয়ে নব গঠিত ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে ‘রাজাকার’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মদদে লালিত ওই ‘সন্ত্রাসীরাই’ এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

রাঙ্গামাটি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্যজিৎ বড়ুয়া সাংবাদিকদের কাছে গোলাগুলির ঘটনা স্বীকার করেছেন।

রাঙ্গামাটি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বেনারকে বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি। তবে, এ ব্যাপারে কেউ এখন পর্যন্ত মামলা করেনি। আমরা তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত তাঁদের কোনো হদিস মেলেনি।”

ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, অপহরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ইউপিডিএফ ঘটিয়ে তাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।

ইউপিডিএফ বিবৃতি

ইউপিডিএফ রাঙ্গামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা রবিবার এক বিবৃতিতে জেলার কুদুকছড়ির আবাসিকে সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র হামলায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের এক নেতাকে গুলিবিদ্ধ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অপহরণ ও ছাত্রদের একটি মেসে আগুন দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, রোববার সকাল সোয়া নয়টার দিকে সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ি- রাঙ্গামাটি সড়ক থেকে কয়েক শ গজ দূরে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা ধর্ম সিং চাকমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা ছাত্রদের একটি মেসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও কেন্দ্রীয় সদস্য দয়াসোনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে আবাসিকের বৌদ্ধ মন্দিরের পাশ দিয়ে খাগড়াছড়ি- রাঙ্গামাটি সড়কের পর্ব পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়।

উক্ত হামলাকে কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক অভিহিত করে তিনি বলেন সরকার ইউপিডিএফ-কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে তার উত্থানকে রুদ্ধ করতে চাইছে।

কিন্তু কোনো ধরনের দমনপীড়ন ও সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে অতীতে ইউপিডিএফের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়নি, ভবিষ্যতেও যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

উক্ত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ও অপহৃতদের মুক্তির দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দেয়।

ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এর ‘অস্বীকার’

ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সদস্যসচিব শ্যামল কান্তি চাকমা জলেয়া সোমবার বেনারকে বলেন, “দেখুন ইউপিডিএফের অস্ত্রধারীরা গত সপ্তাহে তাদের নিয়ন্ত্রিত বাঘাইছড়ি এলাকায় নিজেদের মধ্যে মারামারি করে তাদের এক কর্মীকে কুপিয়ে মেরেছে। আর দোষ দিয়েছে আমাদের। আমাদের পক্ষে কি ওদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গিয়ে হত্যা করা সম্ভব?”

“তাই আমি বলছি, তারা যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে করছে সেটা ঠিক নয়। আমরা ওই দুই নারীকে অপহরণের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নই। তাদের ভেতরে নারী ঘটিত একটি বিষয় নিয়ে ওই দুজনকে অপহরণ করা হয়েছে,” বলেন শ্যামল চাকমা।

তিনি বলেন, আমরা কাউকে গুলি করিনি বা কোন মেসে অগ্নিসংযোগ করিনি।

“সেনাবাহিনী ও পুলিশ আমাদের খুঁজছে। তারা আমাদের দেখলেই ধরে নিয়ে যাবে। তারা কীভাবে বলে যে সেনাবাহিনী আমাদের সহয়তা করেছে। এই কথা একদম ঠিক নয়,” বলেন শ্যামল চাকমা।

তিনি বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালে ইউপিডিএফ গঠিত হয়। আমরা যারা শান্তি চুক্তি বিরোধী তারা একসঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু আমরা যারা সংগঠনের বিভিন্ন দুর্বলতার কথা বলতাম, নেতৃত্বের সমালোচনা করতাম তাদের কোণঠাসা করা হয়। কিছু নেতারা দলকে কুক্ষিগত করে রাখতে চায়।

২০১৫ সাল থেকে ১৫ নভেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গঠিত হওয়ার পর থেকে আমরা যারা মূল নেতৃত্বের সমালোচনা করতাম এমন ১৩ জনকে হত্যা করা হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।