রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ নেতাকে গুলি করে হত্যা
2017.12.05
ঢাকা
প্রতিপক্ষের হামলায় মঙ্গলবার পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে সাবেক এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নিহত হয়েছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বেনারকে বলেন, অনাদি রঞ্জন চাকমা (৫৫) মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় তাঁর নিজ বাসার কাছে নিহত হন।
নানিয়ারচরের স্থানীয়রা বলছেন, অনাদি চাকমা ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি-চুক্তি বিরোধিতাকারী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) একজন নেতা।
সম্প্রতি ইউপিডিএফ থেকে বেরিয়ে কয়েকজন নেতা ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামের একটি পাল্টা সংগঠন গঠন করেছেন। এরপর থেকে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক অনাদি চাকমা হত্যার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছে। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছু বলতে অপারগ।
রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বেনারকে বলেন, অনাদি রঞ্জন চাকমা মঙ্গলবার সকালবেলা বাসা থেকে বের হলে কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি তাকে ধাওয়া করে। অনাদি চাকমা তার বাসার দিকে দৌড়ে পালিয়ে যান।
আক্রমণকারীরা তার বাসার কাছে এসে তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়, জানান তিনি।
সারোয়ার বলেন, “আমরা তার দেহে গুলির চিহ্ন পেয়েছি। লাশ পোস্ট-মর্টেম হবে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর আমরা বলতে পারব কারা কী কারণে তাঁকে হত্যা করেছে।”
তিনি বলেন, “অনাদি চাকমা ইউপিডিএফ’র সদস্য হিসেবে পরিচিত হলেও তার ভাই দাবি করছে অনাদি চাকমা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়।”
সারোয়ার বলেন, “ইউপিডিএফ কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়, তাঁদের কোনো রাজনৈতিক অফিস নেই। তারা মূলত একটি আন্ডার-গ্রাউন্ড দল। আমরা তাঁদের ব্যাপারে কাজ করছি।”
ইউপিডিএফ সদস্য বাবলু চাকমা বেনারকে বলেন, ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের সশস্ত্র ক্যাডাররা অনাদি রঞ্জন চাকমাকে হত্যা করেছে। নিহত অনাদি চাকমা তার দলের সদস্য বলে তিনি দাবি করেন।
অনাদি চাকমা হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও তাদের বিচার দাবি করেছেন বাবলু চাকমা।
ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গ্রুপের মুখপাত্র নাম উল্লেখ না করে বলেন, “অনাদি চাকমাসহ কয়েকজন ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী আমাদের দলে যোগ দিতে যোগাযোগ করেছিল। তারা সকালে আমাদের দলে যোগ দিতে আসার পথে অনাদি রঞ্জন চাকমাকে হত্যা করা হয়।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনসহ আরও কিছু দাবিতে শান্তিবাহিনী নামক গেরিলা সংগঠন গড়ে তোলে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও শান্তিবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটে। লক্ষাধিক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ ভারতে পালিয়ে যায়।
পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ও সন্তু লারমার নেতৃত্বে থাকা শান্তি বাহিনীর রাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
তবে গেরিলা নেতা প্রসিত বিকাশ খিসার নেতৃত্বে শান্তি বাহিনীর একটি অংশ শান্তি-চুক্তির বিরোধিতা করে। পরবর্তীতে তাঁরা ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ গঠন করেন। ইউপিডিএফ পাহাড়ে পূর্ণ-স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। তাঁদের মতে পার্বত্য শান্তি-চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে।
তবে জন সংহতি সমিতি এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
সম্প্রতি ইউপিডিএফ কিছু সদস্যকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আরও কিছু সদস্য ইউপিডিএফ থেকে পদত্যাগ করে গঠন করেন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক।
ইউপিডিএফ’র একজন প্রাক্তন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক গঠিত হওয়ার পর থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছে।
“দুই পক্ষের কাছেই অস্ত্র রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ লেগে যেতে পারে,” তিনি বলেন।