উপজেলা ভোটে দুই দলে অস্বস্তি, তৃণমূলের অনেকে নেতাই কেন্দ্রের নির্দেশ শোনেনি

অয়ন আমান
2024.05.07
ঢাকা
উপজেলা ভোটে দুই দলে অস্বস্তি, তৃণমূলের  অনেকে নেতাই কেন্দ্রের নির্দেশ শোনেনি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বগুড়ার সারিয়াকান্দির একটি রাস্তা পোস্টারে ছেয়ে গেছে। ৪ মে ২০২৪।
[মো: হাসান/বেনারনিউজ]।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে শীর্ষ নেতাদের অস্বস্তির মধ্যেই বুধবার শুরু হতে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার নির্দেশ দেওয়ার পরও সরকারের নয়জন সংসদ সদস্যের ১৩ স্বজন স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনের মাঠ ছাড়েননি। 

আবার নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিলেও বিএনপির প্রায় দেড়শ নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।  বুধবার ভোট শুরুর আগে মঙ্গলবার বিএনপি জনগনকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।     

এর আগে গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।  নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানিয়ে উৎসাহ দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলটি।

উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী দল না আসায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেয় সরকারি দল।  তবে, উপজেলা নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে নিজ দলের মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

দলের তথ্য অনুযায়ী, সেই নির্দেশ অমান্য করে প্রথম ধাপে নয়জন এমপির ১৩ স্বজন শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন।

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না—অভিযোগ তুলে ফের ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছে বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল।

বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এ পর্যন্ত তৃণমূলের ১৪৫ বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এটা নির্বাচন না, খেলা: ড. তোফায়েল

এই পরিস্থিতি প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বেনারকে বলেন, “এগুলো কোনো ভোট বা নির্বাচন না, এগুলো খেলা।  এখানে কে অংশ নিয়েছে  বা নেয়নি-সেটি বড় বিষয় না। যখন নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকে, তখন সেটাকে নির্বাচন বলা যায়।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে প্রতিদিনই একজন আরেকজনকে মারছে।  নির্বাচন আসলে এখন মারামারির সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।  মারামারিকে তাঁরা রাজনীতি ও নির্বাচনের অংশ মনে করেন।”

বিচ্ছিন্ন ঘটনা: শাজাহান খান

যদিও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বেনারকে বলেন, “নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে।  এটাকে বড় কোনো ঘটনা হিসেবে আমি দেখি না।”

ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “জনগণের অংশগ্রহণে ভালো ভোট হবে।  কারণ এবার প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক বেশি।  চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁরা ভোটারদের উপস্থিত করবেন।  ফলে, ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি হবে আশা করি।”

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে দাবি করে শাজাহান খান বলেন, “এই দূরত্বের কারণে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গেছে। কারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো দল রাজনীতি করতে পারে না।”

ভোটে অংশগ্রহণের পরিবেশ নেই: মির্জা আব্বাস

সাধারণ মানুষের ভোটে অংশগ্রহণ করার মতো পরিবেশ নেই বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

বেনারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমরা আগেই বলেছি, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ হয় না।  এখনো দেখছি, যারা নির্বাচন করছে, তাদেরকে অন্যান্য প্রভাবশালী প্রার্থীরা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এতে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ নিজেরা-নিজেরা নির্বাচন করছে।”

আব্বাস বলেন, “সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।  আমরাও দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়েছে।  আওয়ামী লীগ কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন করেনি, করতে পারে না এবং করতে চায়ও না।”

আমরা কোনো বেকায়দায় নেই: সিইসি

নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা কোনো বেকায়দায় নেই।  রাজনৈতিক সদিচ্ছা বিকশিত হওয়ায় তা নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।”

সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না বলেও মন্তব্য করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “স্থানীয়ভাবে সংঘাত-সংঘর্ষ বেশি হয়ে থাকে।  উত্তেজনা থেকে সংঘর্ষ-সহিংসতা যেন না হয় সে জন্য সতর্ক থাকব।”

উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েন করা হয়েছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বেনারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নির্বাচনের ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ৮ মে বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।

চার ধাপে ৪৫০টি উপজেলার মধ্যে বুধবার প্রথম ধাপে ১৪০টিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।  উপজেলা নির্বাচনের পরবর্তী তিন ধাপের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২১ ও ২৯ মে এবং ৫ জুন ২০২৪।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।