মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কায়সারে মৃত্যুদণ্ড বহাল

জেসমিন পাপড়ি
2020.01.14
ঢাকা
200114_Kaysar-Supreme_court_1000.jpg মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে উচ্চ আদালত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় ঢাকার আদালত প্রাঙ্গনে অন্যদের সাথে বিজয়চিহ্ন দেখাচ্ছেন দুজন মুক্তিযোদ্ধা (ডানে)। ৩০ আগস্ট ২০১৬।
[এএফপি]

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। মঙ্গলবার এই রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেত্বতাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এর আগে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা কায়সারের আপিলের আংশিক মঞ্জুর করে আদালত। তবে আপিল আংশিক মঞ্জুর হলেও তাঁর বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা বহাল রাখা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বেনারকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে চারটি অভিযোগের বিরুদ্ধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তার মধ্যে তিনটিতে একই শাস্তি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

তিনি বলেন, “এই তিনটি অভিযোগের অন্যতম একটি হলো ধর্ষণে সহযোগিতা ও নারীদের পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা। ফলে এই প্রথম মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষণে সহযোগিতা করার দায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকল।”

তবে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন জাতীয় পার্টির সাবেক এই নেতা।

এ বিষয়ে কায়সারের আইনজীবী এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত রায়ের সংক্ষিপ্তসার ঘোষণা করেছেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলে সেটা পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগের রায় রিভিউয়ের আবেদন করা হবে।”

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। ফাইল ছবি।
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। ফাইল ছবি।
[ফোকাস বাংলা]

প্রচলিত আইনে, রায় প্রকাশের পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে রিভিউ আবেদন করতে হবে। এই রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পরেই সরকার রায় কার্যকর করতে পারবে। রিভিউ আবেদনে সাজা না কমলে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মোহাম্মদ কায়সার।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি আপিল করেন কায়সার। এর চার বছর পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই থেকে আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়, যার রায় হলো মঙ্গলবার।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাতটি অভিযোগে কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল; এর দুটি ছিল ধর্ষণের অভিযোগ। এ ছাড়া ২২টি গ্রামের ১০৮ জনকে হত্যা ও নিপীড়নের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। অন্যান্য অভিযোগগুলো হত্যা, নির্যাতন, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগের।

কায়সারের আগে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হয়ে ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তাঁরা হলেন, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা ও মীর কাসেম আলী। এ ছাড়া বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

সব বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে এখন আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আপিলের ওপর গত বছরের ৩১ অক্টোবর রায় দেয় আপিল বিভাগ। রায়ে আজাহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় এখন প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এর বাইরে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীম মারা যাওয়ায় তাঁদের করা পৃথক আপিল অকার্যকর বলে ঘোষিত হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের মার্চে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গত প্রায় দশ বছরে ট্যাইব্যুনালে ৩৫টি মামলায় ৮৭ যুদ্ধাপরাধীর সাজা হয়েছে। বিচারাধীন রয়েছে ৩৬টি মামলা। এই সময় ৬৮টি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে এবং ২৮টি অভিযোগ তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জমা রয়েছে আরও ৬৬৭টি অভিযোগ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।