কলকাতা হাইকোর্টের সেই বিচারপতি কারাগারে

পরিতোষ পাল
2017.06.21
কলকাতা
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে প্রেসিডেন্সি জেলের পথে সাবেক বিচারপতি কারনান। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে প্রেসিডেন্সি জেলের পথে সাবেক বিচারপতি কারনান। ২১ জুন ২০১৭।
বেনারনিউজ

কর্মরত অবস্থায় ছয় মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনানকে ৪৩ দিন পলাতক থাকার পর ২০ জুন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কোয়েম্বাটোর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত ৯ মে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত অবস্থায় বিচারপতি কারনানকে আদালত অবমাননার অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়। এই রায় ঘোষণার পর থেকেই কারনান আত্মগোপনে ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক রাজেশ কুমার তাঁকে গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করেছেন।

বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, ভারতের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এর আগে কর্মরত কোনো বিচারপতিকে কারাদণ্ড দেওয়ার নজির নেই।

বুধবার দুপুরে পুলিশি ঘেরাটোপে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসার সময় সাংবাদিকদের কারনান বলেন, “আমি ভালো নেই।”

রাজেশ কুমার বেনারকে বলেন, বুধবার দুপুরে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। কলকাতা বিমানবন্দরেই চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করেন। তাঁকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়েছে।

কারা সূত্রের খবর, সাবেক বিচারপতি কারনানকে জেলে প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডির একটি দল সাবেক বিচারপতি কারনানকে গ্রেপ্তারের জন্য গত ৪৩ দিন ধরে খুঁজছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে কারনানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ কার্যকর করতে বলেছিল।

সুপ্রিম কোর্টের অবসরকালীন বেঞ্চে বুধবার সকালে সাবেক বিচারপতি কারনানের পক্ষে আইনজীবী ম্যাথিউজ জে নেদুমপারা অন্তর্বর্তী জামিন এবং কারাদণ্ড রদ করার আবেদন জানান। কিন্তু অবসরকালীন বেঞ্চ দুটি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন বলে নেদুমপারা সাংবাদিকদের জানান।

অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারক ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারক সঞ্জয় কিষান কাউল বলেছেন, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ৬ মাসের জেল ঘোষণা করেছেন ৭ জন বিচারপতির বেঞ্চ। আমরা ওই আদেশ স্থগিত করতে পারি না। তাঁরা কারাদণ্ডে নির্দেশই বহাল রেখেছেন।

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কেশব ভট্টাচার্য বেনারকে বলেন, “বিচারপতি গ্রেপ্তারের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে অবসর নেওয়ার দু’বছর পর, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অজিত সেনগুপ্ত গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ফেরা (ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট) লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল।”

তিনি বলেন, “কারনান দ্বিতীয় বিচারপতি যিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে কারনান অবসর নেওয়ার আগে তাঁর কারাদণ্ড হয়েছে।”

গত ১১ জুন বিচারপতি কারনান আত্মগোপনে থাকা অবস্থাতেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়ে একটি রেকর্ড করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী অমরেন্দ্র সাহা।

সংকটের সূচনা

মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীনই সাবেক বিচারপতি কারনান বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হন। মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বদলি হওয়ার পর, সেই বদলির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বিচারপতি কারনান।

গত ২৩ জানুয়ারি বিচার বিভাগে দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে তিনি তদন্তের দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে কারনানের বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে সুপ্রিম কোর্ট।

পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট কারনানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষারও নির্দেশ দেয়।

বিচারপতি কারনান অবশ্য সে সময় কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতেই মুখ খুলেছি। এটা জাতীয় স্তরের আলোচ্য বিষয়। এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু নেই।”

তিনি অভিযোগ করেন, উচ্চবর্ণের বিচারপতিরা তিনি দলিত বলেই তাঁকে সরানোর চেষ্টা করছেন।

কলকাতা ও সিকিম হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত বেনারকে বলেন, “বিচারপতি কারনান বারবার দেশের শীর্ষ আদালতকে যে ভাবে অগ্রাহ্য করেছেন এবং বারবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পাল্টা নির্দেশ ঘোষণা করেছেন তাতে সুপ্রিম কোর্টের আদালত অবমাননার অভিযোগে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।”

বিচারপতি কারনান আত্মগোপনে থাকাকালীন অবস্থাতেই তাঁর আইনজীবীরা গত ১৯ মে সুপ্রিম কোর্টের কাছে কারাদণ্ডের আদেশ রদ করার আবেদন জানান। তবে শীর্ষ আদালত সেই সময়ই তা খারিজ করে দেয়।

বুধবারও সুপ্রিম কোর্ট কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে কারনানকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।