বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে দিল্লীতে মমতার তৎপরতা

পরিতোষ পাল
2021.07.27
কলকাতা
বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে দিল্লীতে মমতার তৎপরতা নয়াদিল্লিতে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৭ জুলাই ২০২১।
[ফোকাস বাংলা]

বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রথম দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিরোধী সর্বভারতীয় জোট গঠনের লক্ষ্যে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করতে মমতা সর্বভারতীয় মুখ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করছেন।

বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে তৈরি হওয়া রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাতের আবহের মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার বৈঠকে বসেন।

এদিন বিকেল চারটায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রায় আধঘণ্টার এই ‘সৌজন্যমূলক’ বৈঠকে মূলত পর্যাপ্ত কোভিড ভ্যাকসিন না পাওয়া এবং রাজ্যের নাম বদল নিয়ে কথা হয় বলে গণমাধ্যমে জানান মমতা।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের পাঠানো প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পড়ে রয়েছে।”

“প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন,” বলেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় কোভিড ভ্যাকসিন না পাওয়ার অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, জনসংখ্যার হিসেবে কেন্দ্র থেকে রাজ্যকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে আরও বেশি ভ্যাকসিনের দাবি জানান তিনি।

জোট গঠনের চেষ্টা

গত ২১ জুলাই এক রাজনৈতিক সভায় মমতা বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দলের সংকীর্ণ স্বার্থ ভুলে একটি মঞ্চে আসা দরকার। আর জাতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস এজন্য সব ধরনের ভূমিকা নিতে প্রস্তুত।

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে বিজেপি বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যেই মমতার এই দিল্লি সফর।”

এদিকে মমতা মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, আনন্দ শর্মা ও অভিষেক মনু সিংভির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে কমল নাথ সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে।”

বিজেপিকে পরাজিত করার ক্ষমতা মমতার রয়েছে বলেও জানান কমল নাথ।

মঙ্গলবার মমতা কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে জোট গঠনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। এ ছাড়াও বিরোধী অনেক নেতার সঙ্গেই আগামী চারদিনে মমতা বৈঠক করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানান তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়।

ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে বামরা প্রস্তুত।

তবে সাবেক বামফ্রন্ট মন্ত্রী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক অঞ্জন বেরার মতে, দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর রাজনৈতিক তৎপরতার সবটাই লোক দেখানো এবং আত্মপ্রচার।

“রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর লক্ষ্যে তিনি সর্বভারতীয় রাজনীতি নিয়ে দেন দরবার করছেন,” বেনারকে বলেন অধ্যাপক অঞ্জন বেরা।

পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল

পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়ে গত তিন বছরে কেন্দ্র কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেন মমতা। এর আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নাম বদলের বিষয়টি ত্বরান্বিত করার দাবি জানিয়েছিল।

প্রশাসনিক সুবিধার্থে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়ে রাজ্য সরকার অনেকবারই সচেষ্ট হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যের নাম বদলে ‘বাংলা’ করে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়।

সেই সময়ই বিজেপি রাজ্যের নাম বদলের বিরোধিতা করে স্বাক্ষর অভিযান সংগঠিত করে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠায়।

মুখ্যমন্ত্রীর এই অনুরোধ প্রসঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বেনারকে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল মেনে নেওয়া যায় না। এটি করা হলে ইতিহাসের বিরোধিতা করা হবে। একটি প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।”

আড়িপাতা কাণ্ডের তদন্ত দাবি

ইসরায়েলের তৈরি যন্ত্রের মাধ্যমে রাজনীতিবিদ থেকে সমাজকর্মী পর্যন্ত সর্বস্তরে আড়িপাতার খবর দেশবিদেশের মিডিয়ায় প্রকাশের পর ভারতের লোকসভায় বিবৃতি দাবি করে বিরোধীরা অধিবেশন অচল করে রেখেছে। এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার দিল্লিতে আড়িপাতা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি জানানোর পাশাপাশি ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত কমিটি গঠনেরও দাবি জানান।

তিনি বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা দাবি করেছি আড়িপাতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত করুক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।”

গত রবিবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম রাজ্য হিসেবে আড়িপাতা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে রাজ্য সরকারের এই এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিরোধীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

“যে সরকার গণতন্ত্র মানে না, বাক স্বাধীনতা মানে না তাদের তৈরি কমিশন অর্থহীন,” রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন অধ্যাপক অঞ্জন বেরা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।