কৃষিকাজে নারীদের মাঠে যাওয়া নিষিদ্ধ করে ফতোয়া, ইমামসহ ছয়জন জেলে
2017.12.13
ঢাকা
বিস্ময়কর এক ফতোয়া দিয়ে ফেঁসে গেছেন মসজিদের ইমাম, মসজিদ কমিটির নেতা ও মুসল্লিসহ ছয় ব্যক্তি। তাঁদের বক্তব্য ছিল—ফসল নষ্ট ও অসামাজিক কার্যকলাপের অজুহাতে মাঠে কর্মরত স্বামীকে খাবার দিতে যাওয়া, গবাদিপশু চরানো ও ঘাস কাটাসহ কোনো কাজেই নারীরা মাঠে যেতে পারবে না।
গত ৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদ থেকে নারীদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে বিষয়টি জানানো হয়। ঘোষণায় বলা হয়, ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী নারীদের পর্দায় থাকা উচিত।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠলে গত মঙ্গলবার স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন ফতোয়া দেওয়া ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত এ ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করেছে।
ঘটনার পর গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটায় কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক শেখ রাজিব আল রশিদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি আরও ১০/১৫ জন।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, একই উদ্দেশ্যে সাধনকল্পে ফতোয়া প্রদানের মাধ্যমে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের নারীদের কৃষি কাজে বাধা দেওয়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা অপরাধ।
আসামিরা হলেন; কল্যাণপুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম আবু মুছা (৩৬), মসজিদ কমিটির সভাপতি আলতাব হোসেন (৪০), সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান (৩৮) ও আবুল। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন দুই আসামি হলেন; আনসার আলী (৫০) ও দাউদ শেখ (৩৮)।
এদিকে ছয়জনকেই বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে নেওয়া হয়। রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত আবু মুছা, আলতাব ও মতিয়ারকে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বুধবার সকাল থেকে কল্যাণপুর গ্রামের নারীরা মাঠে কাজে যেতে পারছেন। তারা আগের মতোই স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন।
“একই মসজিদের মাইকে বুধবার সকালে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে, নারীদের মাঠে যেতে বাধা নেই। এরপর থেকে নারীরা মাঠে কাজ করছেন,” বেনারকে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুজ্জামান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক সূত্র জানায়, ৮ ডিসেম্বর মসজিদের পেশ ইমাম আবু মুছা জুমার নামাজের পর সবাইকে মসজিদে বসার জন্য আহ্বান করেছিলেন। নামাজ শেষে মোনাজাতের আগে বৈঠক হয়। পেশ ইমাম আবু মুছা বলেন, ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী নারীদের পর্দায় রাখা ঈমানী দায়িত্ব। তাই নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধ করতে সকলকে আহ্বান জানান তিনি। তাঁর এই আহ্বানে মসজিদের কেউ আপত্তি জানাননি।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম মেহেদি হাসান বেনারকে বলেন, ঘটনাটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা করছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের অভিযান শুরুর পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
“এ ধরনের ঘটনা নিন্দনীয়, দুঃখজনক। এমন গর্হিত অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত,” বেনারকে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
ওই নারী নেত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নারীরা বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। সবক্ষেত্র নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, স্পিকার—নারী। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের ফতোয়া পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।