মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার: পুনরায় কর্মী পাঠানো বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক স্থগিত

জেসমিন পাপড়ি
2019.11.25
ঢাকা
191125_Malysia_Bangladesh_1000.JPG মালয়েশিয়ার জহর প্রদেশের কুলাই এলাকায় পুরোনো টায়ার থেকে জ্বালানি উৎপাদনের একটি কারখানায় কাজের ফাঁকে চা খাচ্ছেন একজন বাংলাদেশি শ্রমিক। ৭ আগস্ট ২০১৯।
[রয়টার্স]

এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আবারো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশের নির্ধারিত বৈঠকটি ‘মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ কারণে’ স্থগিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কর্মকর্তারা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির চতুর্থ বৈঠক ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

“মালয়েশিয়ার আভ্যন্তরীণ কারণেই বৈঠকটি আপাতত স্থগিত হয়েছে। তাদের টেকনিকালটিসের কারণেই বৈঠকটি হচ্ছে না,” সোমবার বেনারকে বলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।

পরবর্তী তারিখ এখনো ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “শিগগির বৈঠকের তারিখ পুনর্নির্ধারণ হবে।”

এদিকে বৈঠকটি স্থগিত হওয়ার কারণ ‘জানা নেই’ বলে বেনারকে জানান মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রী কুলা সেগারান বলতে পারবেন।

তবে মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজের তথ্যমতে মন্ত্রী কুলা সেগারান বতর্মানে ভারত সফরে রয়েছেন।

ঢাকার বৈঠকের পর কর্মী পাঠানো পুনরায় শুরু হবে বলে মালয়েশিয়া সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী।

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী এবারের মালয়েশিয়া সফরে দেশটির মন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বৈঠক করেছেন, আলোচনা করেছেন। এটি ছিল তাঁর সফলতম সফর।"

“তাঁর এ সফরে শ্রম বাজার উন্মুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েই আছে। এখন এটা নিয়ে একটা প্রোটোকল বা টার্মস অব রেফারেন্স স্বাক্ষর হবে, সেই ব্যাপারটাতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে বৈঠকের তারিখ পুনরায় নির্ধারিত হবে," তিনি বলেন।

বায়রা মহাসচিব বলেন, “মালয়েশিয়া কেবিনেট ঘোষণা দিয়েছে তাদের ৬ লক্ষ কর্মী প্রয়োজন। সুতরাং মালয়েশিয়ার কর্মী প্রয়োজন এটা নিশ্চিত। কী প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে সে বিষয়েও দুদেশ মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

“ডিসেম্বর থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হওয়ার কথা ছিল, নির্ধারিত সময়ে বৈঠকটি না হওয়ায় সেটি হয়তো আরো কিছুদিন পিছিয়ে যাবে,” যোগ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে জিটুজি (গভমেন্ট টু গভমেন্ট) পদ্ধতিতে কর্মী পাঠাতে চুক্তি করে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ। ওই প্রক্রিয়া সফল না হওয়ায় ২০১৬ সালে পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে কর্মী নিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে দুদেশ। পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।

কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার কারণে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ারা শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত করতে দেশটির সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে সরকার। তারই অংশ হিসেবে গত ৬ নভেম্বর সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

বাজারটি উন্মুক্ত করতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলা সেগারানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে সাক্ষাত করেও শ্রমবাজারটি পুনরায় খুলতে তাঁর সহযোগিতা চান ইমরান আহমদ।

ওই সফরকালে ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিড়ম্বনা নিরসনে বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার আগে মাত্র একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার বিষয়েও দুপক্ষ একমত হয় বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী।

পাশাপাশি, “মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠাতে কেবল ১০টি এজেন্সি সুযোগ পাবে না, এবার আমরা রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা বাড়াব,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে মালয়েশিয়াতে প্রায় চার লাখ বৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। অন্যদিকে অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের মতে দেশটিতে আরো এক থেকে দুই লাখ অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় দেশটিতে তাঁরা অবৈধ হয়ে পড়েছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।