ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল, মালয়েশিয়ার ইসলামি সম্মেলনে যাচ্ছেন না জাকির নায়েক

হাতা ওয়াহারি ও কামরান রেজা চৌধুরী
2017.07.18
কুয়ালালামপুর ও ঢাকা
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের (বামে) কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাদশা ফয়সল আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০১৫ গ্রহণ করেন জাকির নায়েক সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের (বামে) কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাদশা ফয়সল আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০১৫ গ্রহণ করেন জাকির নায়েক। রিয়াদ, ১ মার্চ ২০১৫।
AFP/HO/King Faisal Foundation

বিতর্কিত ইসলাম প্রচারক জাকির নায়েক মালয়েশিয়ার ইসলামি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের আয়োজক প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামি পার্টি (পিএএস) কর্তৃপক্ষ। আগামী শনিবার দেশটির কালান্তান প্রদেশের ওই অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতা দেবার কথা ছিল।

ভারত সরকার দেশটির নাগরিক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জাকির নায়েকের পাসপোর্ট বাতিল করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সম্মেলন আয়োজকদের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এলো।

গত মে মাসে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব নেওয়া জাকির নায়েক মঙ্গলবার আয়োজকদেরকে ‘অনিবার্য কারণবশত’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারার কথা জানিয়েছেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন পিএএস এর তথ্য বিভাগের প্রধান নাসরুদ্দিন তানতাভি।

পিএএস এর সংবাদমাধ্যম হারাকাহ অনলাইন জানায়, “আমন্ত্রণ রক্ষা করতে না পারার জন্য” তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া জাকির নায়েকের স্থলে অন্য বক্তার নাম শিঘ্রই ঘোষণা করা হবে বলেও সংবাদমাধ্যটি থেকে জানা যায়।

টাইমস অব ইন্ডিয়ায় মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, মালয়েশিয়ার সম্মেলনে জাকির নায়েকের অংশগ্রহণের বিষয়টি জানার পর অতি দ্রুত ভারত সরকার তাঁর পাসপোর্ট প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে ভ্রমণের জন্য বাধ্য হয়ে তাঁকে সৌদি আরব অথবা মালয়েশিয়ার কাছে বিশেষ ট্রাভেল ডকুমেন্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে।

এতে ওইসব দেশের ওপর কূটনৈতিক প্রয়োগের সুযোগ পাবে ভারত, তাছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উপস্থাপনেরও সুযোগ পাবে দেশটি, জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনটির মতে, মুম্বাই-ভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (আইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা জাকির নায়েক তাঁর এনিজওর বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কর্তৃক জারি করা সমন বারবার উপেক্ষা করেছেন।

তিনি ২০১৬ সালের জুন থেকে ভারত ছেড়ে সৌদি আরবে বসবাস করছেন বলেও প্রতিবেদনটি জানায়।

বৈদেশিক অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন ও বেআইনী কার্যক্রম প্রতিরোধ আইনের অধীনের ভারত সরকার ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এ সময় পিস টিভিতে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় আল-কায়েদার আত্মঘাতী হামলা সমর্থন, দলটির প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেন এর প্রশংসা ও হিন্দু দেবদেবীকে অবমাননা করার অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, মালয়েশিয়ার স্বাগত
২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি করে ২০জনকে হত্যার সাথে জড়িত জঙ্গিরা জাকির নায়েকের বক্তৃতা দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। এর পরেই সরকার বাংলাদেশে জাকির নায়েকের পিস টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়।

“জাকির নায়েক কোনোভাবেই বাংলাদেশে স্বাগত নন,” বেনারকে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, “তাঁর বক্তব্য কিছু কিছু জঙ্গিকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তাই তাঁকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”

“সরকারি সিন্ধান্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁর পিস স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় পিস টিভির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছে,” বেনারকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে, বাংলাদেশে জাকির নায়েকের অনেক ভক্তও রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ৫৫ বছর বয়স্ক তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আহমেদুল কবির বেনারকে বলেন, “জাকির নায়েকের বক্তব্যে গতানুগতিক ইমামদের বক্তৃতার চেয়ে ইসলামের নতুন ব্যাখ্যা রয়েছে; তিনি দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও বিজ্ঞানের সাথে কুরানকে সম্পৃক্ত করেন।”
“আমি ১০ বছরের বেশি সময় থেকে তাঁর ভক্ত। আমি কখনোই তাঁকে মানুষ হত্যার পক্ষে কথা বলতে শুনিনি। সুতরাং, তাঁর পিসি টিভি বন্ধ করার কোনো যুক্তি আমি দেখি না,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে, মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ইসলামি সম্মেলনে যোগ দিতে জাকির নায়েককে কালান্তান যাবার অনুমতি দেবার পরিকল্পনা করেছে বলে সোমবার বেনারকে জানিয়েছেন দেশটির পুলিশ প্রধান।

মালয়েশিয়া পুলিশ জাকির নায়েক এর বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করেনি কারণ, দেশটির সরকার ভারতের কাছ থেকে তাঁকে গ্রেফতার বা আটক বিষয়ে কোনো ধরনের অনুরোধ পায়নি বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়া পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল খালিদ আবু বাকার।

ভারত জাকির নায়েকের পাসপোর্ট বাতিল করার আগে খালিদ জানিয়েছিলেন, “জাকির নায়েক যে কোনো সময় মালয়েশিয়া আসতে পারেন, কারণ তিনি মালয়েশিয়ার একজন স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।”

“বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বেআইনি কার্যক্রম বা জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ বা তদন্ত নেই,” বলেন মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।