জাকির নায়েককে ফেরত পাঠাতে মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করবে ভারত
2017.11.03
মুম্বাই
অর্থ পাচার ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত বিতর্কিত ইসলাম প্রচারক জাকির নায়েককে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করবে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে সপ্তা দুয়েকের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবিশ কুমার।
“কাউকে ফেরত পাঠানোর জন্য কোনো দেশের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে আলোচনাসহ অভ্যন্তরীণ কিছু আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়,” বলেন কুমার।
তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা সেসব প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছি। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমরা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠাব।”
“এটা দুদিনের মধ্যেই হয়ে যেতে পারে, আবার সপ্তা দুয়েকও লাগতে পারে। তবে দ্রুতই হবে এবং (মালয়েশিয়ার কাছে) আমাদের অনুরোধের ধরনও হবে খুব স্পষ্ট,” বলেন কুমার।
ঢাকার গুলশানে ২০১৬ সালের জুলাইতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মাসখানেক আগে জাকির নায়েক ভারত ছেড়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। ধারণা করা হয় তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়া রয়েছেন। জাকির নায়েক মালয়েশিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
চলতি সপ্তায় মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী জানান, জাকির নায়েক দেশটিতে বৈধভাবেই স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, জাকির নায়েক যদি স্থানীয় কোনো আইন ভঙ্গ করেন, অথবা তাঁর বিরুদ্ধে যদি জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় যায়, তবেই শুধু মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করবে।
২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি করে ২০জনকে হত্যার সাথে জড়িত জঙ্গিরা জাকির নায়েকের বক্তৃতা দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল বলে সেসময় জানিয়েছিল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। এর পরেই সরকার বাংলাদেশে জাকির নায়েকের পিস টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়। পিস টিভি ভারত ও বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ।
ভারত সরকার ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই প্রতিষ্ঠানটি আংশিকভাবে পিস টিভির আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত।
এ সময় পিস টিভিতে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় আল-কায়েদার আত্মঘাতী হামলা সমর্থন, দলটির প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেন এর প্রশংসা ও হিন্দু দেবদেবীকে অবমাননা করার অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়।
যেহেতু “জাকির নায়েকের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ভারতের জানা আছে”, সেহেতু তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতাতেই হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান রাবিশ কুমার।
অভিযোগ অস্বীকার আইনজীবীর
“সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য বলেই জাকির নায়েককে হয়রানি করা হচ্ছে। তদন্ত সংস্থাগুলো যেসব অভিযোগ গঠনের চেষ্টা করছে, সেগুলোর সবই গৎবাঁধা এবং সেগুলো তারা প্রমাণও করতে পারবে না,” দিল্লি থেকে টেলিফোনে বেনারকে বলেন জাকির নায়েকের আইনজীবী এস হরিহরণ।
“অভিযোগগুলোতে সত্যতা নেই এবং এগুলো আদালতে টিকবেও না। আমরা তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করব,” বলেন তিনি।
গত সপ্তায় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে উস্কানি দেওয়ার মাধ্যমে বেআইনি চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ৬১ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এর আগে এপ্রিলে নিজের এনজিওর মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। জুলাইতে তাঁর পাসপোর্টও বাতিল করে ভারত সরকার।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জাকির নায়েককে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের যে কোনো অনুরোধ উপেক্ষা করার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির বিরোধী দল প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পিএএস)।
পিএএস এর সভাপতি আবদুল হাদি আওয়াঙ মালয়েশিয়ার সংবাদপত্র হারাকা ডেইলিতে গত সপ্তায় এক নিবন্ধে লেখেন, “এমনকি জাকির নায়েকের মতো মুসলমানরা যখন অস্ত্রের বদলে যুক্তি দিয়ে বিজয় অর্জন করেন, তখনও তাঁদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ তাঁদের যুক্তি খণ্ডণ করা সম্ভব নয়।”