আরও ছয় মাস বাড়ল খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ

জেসমিন পাপড়ি
2020.09.15
ঢাকা
আরও ছয় মাস বাড়ল খালেদা জিয়ার  সাজা স্থগিতের মেয়াদ1000 জামিনে মুক্তির পরে বাড়ি ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২৫ মার্চ, ২০২০।
নিউজরুম ফটো।

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে সরকার। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপণে এ কথা জানানো হয়।

নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ ও দেশের বাইরে না যাওয়ার পূর্ব শর্তেই খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টিতে অনুমোদন দেওয়া হয়।

“বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তাঁর পরিবার আবেদন করেছিল। বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আইন মন্ত্রণালয় আমাদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) কাছে সুপারিশ পাঠায়। তাতে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন,” মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত ছয় মাস খালেদা জিয়ার পরিবার তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। এই বিবেচনায় তাঁর মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।”

“তবে পূর্ব শর্ত অনুযায়ী, এই বর্ধিত সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত ২৪ মার্চ থেকে সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে বাসায় অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। এই সময়ে তিনি গণমাধ্যমে কোনও কথা বলেননি।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বেনারকে বলেন, আ​ইনগতভাবে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁর মতে, সরকার আদালতের দেওয়া সাজা বাতিল করতে পারে না, কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে বা মানবিক কারণে সাজা স্থগিত করতে পারে।

এদিকে খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেওয়া সরকারের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়াকে এই অবস্থায় রেখে সম্ভবত সরকার দুই দিক রক্ষা করছে। তিনি বয়স্ক একজন নারী এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী-এসব কারণে এক ধরনের সেন্টিমেন্ট তৈরি হতে পারে। আবার এর মাধ্যমে তাঁকে বিদেশে যেতে না দিয়ে দেশে রাখাও সম্ভব হচ্ছে।”

“সম্ভবত সরকার নিশ্চিত যে, বিএনপির পক্ষে তেমন কোনো বড় আন্দোলন এই মুহুর্তে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এটা সরকারকে সুবিধাজনক অবস্থায় রেখেছে,” মনে করেন শান্তনু মজুমদার।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। যার মেয়াদ ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। বর্ধিত মুক্তি ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে।

খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে রাজধানী ঢাকার গুলশানে তাঁর ভাড়া বাসাতে অবস্থান করছেন। আর্থারাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন ৭৫ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দেয় ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। সে বছরের ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তাঁর সাজার মেয়াদ আরো পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে দেয় উচ্চ আদালত।

একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।

ও্নাকে মুক্ত করা জরুরি: ফখরুল

জামিনের মেয়াদ বাড়লেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে এই ‘গৃহঅন্তরীন’ থেকে মুক্ত করাই জরুরি কাজ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা দলটির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরো ৬ মাস বাড়িয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

ফখরুল ইসলাম মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়ার গৃহঅন্তরীন হয়ে থাকায় বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তাঁকে বের করে আনাটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আর এটাই হবে তাঁর দলের প্রধান কাজ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।