সেনাবাহিনী পেলো বিচারিক ক্ষমতা
2024.09.17
ঢাকা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, দুই মাসের জন্য এই প্রজ্ঞাপন বলবত থাকবে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, পোশাক কারখানায় অস্থিরতা, মব অ্যাটাকের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও খুব বেশি সক্রিয়তা দেখানোর আইনি সুযোগ ছিল না। এখন সেটা তৈরি হলো।”
“এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এই সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক হয়েছে। এর ফলে অপরাধীরা সাবধান হয়ে যাবে। আশা করা যায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অল্প সময়ের মধ্যে উন্নতি হবে,” বলেন তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের জন্য সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন থেকে বিচারিক ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, বেসামরিক প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও বিচারিক ক্ষমতার প্রয়োগ করে থাকেন, যা অব্যাহত থাকবে।
সরকারের নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী এই ক্ষমতা দিয়ে সেনা কর্মকর্তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বেনারকে বলেন, “সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার খবরটি সঠিক।”
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে সারা দেশে একযোগে কর্মবিরতিতে যায় পুলিশ। পরে সরকার তাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়ার পর পুলিশ থানায় ফিরলেও তাঁরা এখনো সক্রিয় নন বলে অভিযোগ রয়েছে। যা স্বীকার করছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।” তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়া পল্টনে আয়োজিত এক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তারেক রহমান। হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে এই সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
তিনি বলেন, “এই সরকারের কার্যক্রম সকলের কাছে হয়ত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। তবে এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষে জনগণের ব্যর্থতা। সেজন্য এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না।”
“জনগণ এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে,” উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার করে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার কাজকে অগ্রাধিকার হিসেবে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন।
তিনি বলেন, “আজকে আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা সুযোগ পেয়েছি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সবাইকে অনুরোধ করব, সুযোগটা যেন হেলায় না হারাই।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা হচ্ছেন গণতন্ত্রের ভ্যানগার্ড, পাহারাদার। সে জন্য গণতন্ত্রকে কেউ যদি ধ্বংস করতে চায়, আবার বিপথে নিতে চায়, সেখানে অবশ্যই আপনারা রুখে দাঁড়াবেন।”
তারেক রহমানের বক্তব্যকে অত্যন্ত ইতিবাচক ও সময়োপযোগী হিসেবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ।
“তিনি (তারেক) সরকারকে সহায়তার কথা বলেছেন। বলেছেন এই সরকার ব্যর্থ হলে আমরা সবাই ব্যর্থ হবো, এটা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক দিক,” বলেন মাহবুব।
তিনি বলেন, “তারেক রহমানের বক্তব্যে প্রাজ্ঞতা দেখা গেছে।”